রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন

‘আমাগো যা ছিল সবই নদীতে গিলে খেলো’

‘আমাগো যা ছিল সবই নদীতে গিলে খেলো’

স্বদেশ ডেস্ক: ‘জীবনের শুরু থিকা চরে বাস করি। তখন নদীর ভাঙ্গন ছিল মেলা দূরে। গত বছরও ভাবি নাই এ বছর আমাগো সব শ্যাষ হইয়া যাইবে। চোখের সামনে আমাগো যা ছিল সবই নদীতে গিলে খেলো।’ কথাগুলো মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের মিনাকান্দি এলাকার ষাটোর্ধ্ব জেলে জোহরুদ্দিন মিয়ার।
গত দুই সপ্তাহ আগে বসতঘর, জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় তাঁর। এরপর দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যের ভিটায়। শুধু জোহরুদ্দিন নয়, তার মতো এমন আরও দুই শতাধিক পরিবার পদ্মার ভাঙ্গনে এখন দিশেহারা।
শিবচর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন জুঁড়েই পদ্মার চরাঞ্চল। বর্ষার মৌসুমে পানি বেড়ে যাওয়ায় বুক পানিতে তলিয়ে চরাঞ্চলের বেশির ভাগ জমি।

বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন চরাঞ্চলের প্রায় ২৪০০ পরিবার। উঁচু স্থানগুলোতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন।

মঙ্গলবার দুপুরে চরজানাজাত ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নটির ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু মাত্র ইউনিয়নটির ৯নং ওয়ার্ড এখনো বিলীন হয়নি। তবে, ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রামে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। কোথায় কোমর পানি, কোথায় বুক পানি। পানির মধ্যে এখনো বসবাস করছে কিছু মানুষ। পদ্মার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে। অনেকে বাড়িঘর ভেঙ্গে ও গবাদি পশু নৌকায় তুলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুঁটে চলছে।
একে একে দুবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আমিনা খাতুনের বসতঘর। তবুও বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়ে তিনি মানবজমিনকে বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমাগো অনেক জমিজমা ছিল। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন সব শ্যাষ। গত বছর যেখানে নতুন ঘর বানাইছি, সেই ঘরও আর নাই। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এক টাকারও কেউ ত্রাণ দেয় নাই।’
ভাঙ্গনে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল খালেক মাদবর বলেন, ‘ঘর, গাছ-পালা যা ছিল সব নদীতে গিলে খেয়েছে। নিজের বলে আর কোন জমি নাই। অন্যের ভিটায় চার ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে উঠেছি। জানি না এখানে কতদিন থাকতে পারবো।’
পদ্মার চরে একছটা বালু চরে বাদাম চাষ করে যা আয় হত তা দিয়েই সংসার চলাত আবু বক্কর সিদ্দিক। এবার বন্যার পানিতে বাদামের খেত গেছে তলিয়ে। পরিবার নিয়ে পানিবন্দি জীবন কাটানো আবু বক্কর সিদ্দিক মানবজমিনকে বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। সামান্য কিছু বাদাল তুলেছি। বাকি সব বাদাম বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। দুই বেলা শুকনা খাবার খেয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। এখন সরকারি সহযোগিতা না পেলে আর কতদিন এভাবে বাঁচবো জানি না।’
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র মতে, গত দুই সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শিবচরের চরাঞ্চলের বন্দরখোলা, চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ি ও মাদবরেরচরসহ ৯টি ইউনিয়নে বন্যার পানি উঠেছে। তবে নদী ভাঙ্গন রয়েছে চারটি ইউনিয়নে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চরজানাজাত ইউনিয়ন। পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে গত বছরে ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ একটি মসজিদ ভবন ও অস্থায়ী বাধের প্রায় ৫০ মিটার। পানিতে তলীয়য়ে গেছে বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যুতের খুটিসহ অসংখ্য ফসলি জমি। এছাড়াও ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবন, প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, একটি বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ।
জানতে চাইলে শিবচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে সরকারি সহযোগিতা করা হবে। ত্রাণ পৌঁচ্ছে দেওয়া হবে। ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি খাস জমিতে ঘর করে আশ্রয় দেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877